Homeঅর্থনীতিচট্টগ্রাম বন্দর এখন ‘ফুল অটোমেটেড’

চট্টগ্রাম বন্দর এখন ‘ফুল অটোমেটেড’

বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর ফুল অটোমেটেড বন্দরে পরিণত হয়েছে। ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের কম্পিউটারাইজড কন্টেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) উদ্বোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে।

বর্তমানে সিটিএমএসকে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম (টিওএস) করা হয়েছে। টায়ার-২ সমমানের একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এ ডাটা সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের আধুনিক বন্দরগুলোর ন্যায় নিরবচ্ছিন্নভাবে অপারেশনাল অটোমেশন সেবা নিশ্চিত করতে পারবে।

রবিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সি অডিটরিয়ামে সাংবাদিকদের সাথে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বন্দর চেয়ারম্যান। ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

এম শাহজাহান বলেন, ‘গত ৩০ মার্চ মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ২৮৩.২৭ একর জমি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বুঝিয়ে দিয়েছে। বন্দর নির্মাণ কাজের জন্য শীঘ্রই ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। মাতারবাড়ি বন্দর বাস্তবায়িত হলে ১৮ মিটার গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ গমনাগমন করতে সক্ষম হবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এই বন্দর ব্যবসা-বাণিজ্যের রিজিওনাল হাবে পরিণত হবে। এছাড়া অন্যান্য বন্দর সার্ভিস বন্দর হিসেবে কাজ করবে।’

সভাপতির বক্তব্যে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের সাথে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু আরএমজি পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সমুদ্রপথে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের বন্দরে চলাচলের জন্য আজ (২৪ এপ্রিল) একটি জাহাজের অনুমোদন দিয়েছি। এছাড়া স্লোভেনিয়া, পর্তুগাল, দুবাইতে সরাসরি জাহাজ চলাচলের বিষয়ে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই এসব রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হবে।’

বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড তৈরি করায় কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। পোর্ট লিমিট ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত করা হয়েছে। পোর্ট লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়াতে কাণ্ডারী ৬ ও ১২ নামের ২টি টাগবোট, ২টি মুরিং লঞ্চ, ২টি সাইট স্ক্যান সোনার, ২টি ইকো সাউন্ডার, ১টি সমুদ্রগামী হারবার টাগবোট সংগ্রহ করা হয়েছে। গত এক দশকে শিপ টু শোর কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, মোবাইল হারবার ক্রেন, রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের ৩৯০টি কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২১ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনার), প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৬৬ লাখ টন, প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৩ শতাংশ। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২০৯টি, প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ। এ অর্জন বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদী প্রক্ষেপণ ছাড়িয়ে গেছে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বন্দরে জাহানের গড় অবস্থানকাল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক। বর্তমানে কন্টেইনারবাহী জাহাজ বহির্নোঙরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে, ক্ষেত্রবিশেষে অন-আরাইভাল বার্থিং প্রদান করা হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে বিশ্বের অনেক উন্নত বন্দরে যেখানে দীর্ঘদিন ধরে জট ছিলো, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দরে কোন জট সৃষ্টি হয়নি। বন্দরের সেবা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে আমরা বন্দরের ৫২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে হারিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বন্দরে রপ্তানি কনটেইনার স্ক্যান করার জন্য দুটি আধুনিক স্ক্যানার সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান আছে। গত ১ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কোন ডাকাতি-চুরির ঘটনা ঘটেনি। গত তিন বছর সিঙ্গাপুর ভিত্তিক আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক সংস্থা রিক্যাপ তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরকে জিরো পাইরেসি পোর্ট হিসেবে ঘোষণা করে।’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য (অর্থ) কামরুল আমিন, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান সহ সব বিভাগীয় প্রধান।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত