Homeঅনুসন্ধানী প্রতিবেদনকারসাজি বোঝে সবাই, মেলে না যোগসূত্র

কারসাজি বোঝে সবাই, মেলে না যোগসূত্র

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: পুঁজিবাজারে প্রায়ই দেখা যায় কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের আগে আগে শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে বা কমে যাচ্ছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে ইতিবাচক ঘোষণা আসার আগে দর বেড়ে যায়, আর ‘খারাপ তথ্য’ থাকলে শেয়ারদর কমে যায়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, পুঁজিবাজার পর্যবেক্ষক বা বিনিয়োগকারী, সবাই বোঝে কোম্পানিরই কেউ না কেউ সেই তথ্য ফাঁস করেছে। কিন্তু কে বা কারা করেছে, তা আর চিহ্নিত হয় না।

এ প্রক্রিয়ায় এক শ্রেণির মানুষ বিপুল পরিমাণ অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে। কম দামের শেয়ার অন্যদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ‘আরও বাড়বে’ ভেবে তা কিনে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে।

দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আসা অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, পুঁজিবাজারে এ বিষয়টি সবারই জানা। কিন্তু ‘গা সওয়া হয়ে গেছে।’

তার বিবেচনায়, এভাব প্রতিবার প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের আগে বিপুল পরিমাণ টাকা কামানোর সুযোগের কারণেই দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে যায় না বিনিয়োগকারীরা।

বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’ হচ্ছে বোঝা গেলেও প্রমাণের অভাবে কাউকে ধরা যায় না।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে একটি বহুজাতিক কোম্পানি দুইবার দুইশ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন ছয় গুণ করেছে। লভ্যাংশ ঘোষণার আগে দুইবারই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সেই তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বলেছেন, “সব কিছু আইন দিয়ে হয় না। সততা ও নিষ্ঠাও জরুরি।”

কোম্পানিগুলোকে এসব বিষয়ে আরও জোর দিতে সচেতনতামূলক কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

যে কারণে সন্দেহ

শেয়ারদরে সবশেষ অস্বাভাবিক উত্থানের ঘটনা ঘটেছে বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্টের ক্ষেত্রে।

গত বছরের ২২ নভেম্বর থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস ১৭৯ টাকা ১০ পয়সায় ক্রেতা ছিল না। তবে ২৭ এপ্রিল লভ্যাংশ এবং প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের আগে শেয়ারদর এবং লেনদেনে ঘটে উত্থান।

পর্ষদ সভার আগেই টানা তিন দিন শেয়ারদর লাফ দিয়ে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে ফেলে। তিন দিনে ৩৮ শতাংশের বেশি বেড়ে শেয়ারদর উঠে যায় ২৪৭ টাকা ৮০ পয়সায়।

হঠাৎ এই কোম্পানির শেয়ারে এত আগ্রহ কেন, সেই প্রশ্ন তখন সামনে আসে।

পর্ষদ সভায় ২০২২ সালের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে এ কোম্পানি যে বিবরণ প্রকাশ করে, তাতে বিনিয়োগকারীদের খুশি হওয়ার কিছু ছিল না। এই বছরে ১০ টাকার শেয়ারপ্রতি ৪ টাকা ১০ লোকসান হওয়ার তথ্য জানায় হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। তারপরও শেয়ার প্রতি এক টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পর্যদ।

তবে দ্বিতীয় যে সভাটি হয়, তাতে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে শেয়ার প্রতি ৬ টাকা ৮৫ পয়সা আয় হয়েছে কোম্পানির।

মূল্য সংবেদনশীল তথ্যটি প্রকাশের দিন লভ্যাংশের ঘোষণার কারণে দাম হ্রাসবৃদ্ধির কোনো সীমা ছিল না। সেদিন দর আরও বেড়ে ৩৪৯ টাকা পর্যন্ত ওঠে। পরে অবশ্য কিছুটা সংশোধন হয়ে এখন তিনশ টাকার কাছাকাছি চলছে।

কেন দর বাড়ছে, সেই প্রশ্নের জবাবও পাওয়া যায় সেদিন। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির ব্যবসা ভালো হয়েছে, এটা কোনো না কোনোভাবে কেউ না কেউ জেনে গিয়ে ক্রগামত শেয়ার কিনছিলেন।

হাইডেলবার্গের চেয়ে বেশি হারে দর বেড়েছে এমারেল্ড অয়েলের। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ফ্লোর প্রাইস তুলে দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ করার পর থেকে প্রতিদিনই প্রায় এক শতাংশ করে দর ২৮ টাকার ঘরে নেমে আসে।

এরপর শেয়ারদর ৩০ টাকায় নেমে ঘুরপাক খায় দুই মাস ধরে। গত ২ এপ্রিলও শেয়ারদর ছিল ৩০ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর শুরু হয় অবিশ্বাস্য এক উত্থান পর্ব। কেবল ২২ কর্মদিবসে শেয়ারদর আড়াই গুণ হয়ে এখন ৭৫ টাকার আশেপাশে।

৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকার ঘরে ওঠার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এ কোম্পানির বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই তদন্ত চলাকালেই শেয়ারদর সেখান থেকেও ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়।

বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে ২০১৭ সালে বন্ধ হওয়ার পাঁচ বছর পর গত বছর উৎপাদনের ঘোষণা দেয় এমারেল্ড অয়েল।

এ কোম্পানি স্পন্দন নামে ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদন করত। তবে সেই তেল এখনও বাজারে আসেনি। উৎপাদনে ফেরার পর একসঙ্গে তিন বছরের যে আর্থিক হিসাব প্রকাশ হয়েছে, তাতে এক বছরে শেয়ার প্রতি ৩৪ টাকার বেশি এবং দুই বছর এক টাকার বেশি করে লোকসানের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

এখনও ২০২০, ২১ এবং চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে এক প্রান্তিকেরও প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি। তাহলে কেন এভাবে অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ছে, এই প্রশ্নের মধ্য ৯ মে এমারেল্ড অয়েল প্রকাশ করে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য।

কোম্পানি জানায়, তারা নতুন হাস্ক বয়লারে উৎপাদন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন চালিয়ে যেতে আর কোনো বাধা থাকবে না। দৈনিক তেল পরিশোধন ক্ষমতা ৩০ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে হবে ৭০ মেট্রিক টন।

একইভাবে খাদ্য খাতের আরও তিন কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে লাফ দেওয়ার পর কোম্পানির ব্যবসা বাড়ার তথ্য প্রকাশ হয়।

এপেক্স ফুডসের দরে অস্বাভাবিক উত্থান দেখা দেয় চলতি বছরের ২৯ মার্চ থেকে। আগের দিন দর ছিল ২২৭ টাকা ৯০ পয়সা। এখন দর ছাড়িয়ে গেছে সাড়ে চারশ টাকা।

এই উত্থানের মধ্যে ২০ এপ্রিল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬৫ শতাংশ আয়ের তথ্য প্রকাশ পায়। তিন প্রান্তিক মিলিয়েই কোম্পানির আয় হয়েছে আগের বছরের প্রায় তিন গুণ।

জেমিনি সি ফুডের শেয়ারদর গত ২৮ মার্চও ছিল ৪৫৬ টাকা ৭০ পয়সা। ১৭ এপ্রিল বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশের দিন দর দাঁড়ায় ৭৯০ টাকা।

পরে জানা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৮ টাকা ২০ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪ পয়সা।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেখান থেকেও দর আরও বেড়ে এখন ৯০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

রহিমা ফুডের শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইস ২৩৭ টাকা ৭০ পয়সায় পড়ে ছিল পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে। ২৭ মার্চ হঠাৎ সেখান থেকে সাড়ে আট শতাংশ বেড়ে যায়। এর দুই দিন পরে প্রকাশ পায় প্রান্তিক প্রতিবেদন, যাতে কোম্পানির আয় ব্যাপক হারে বৃদ্ধির চিত্র উঠে আসে।

এ কোম্পানি চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৮১ পয়সা আয় করেছে। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি ২ পয়সা লোকসান হয় কোম্পানির। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর দর ২৯৪ টাকায় উঠে গিয়েছিল। সেখান থেকে কমে এখন ২৬০ টাকার আশপাশে।

বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের আগেও লেনদেন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, দামও বাড়ে ১০ শতাংশের মত।

গত ১৩ মার্চ থেকে কোম্পিানির শেয়ারের লেনদেন হচ্ছিল না বললেই চলে। ১ হাজার ১৬১ কোটি ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির হাজারখানেক শেয়ারও এক দিনে লেনদেন হতে দেখা গেছে।

আগের অর্থবছরে ৩৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং শেয়ারপ্রতি আয় ক্রমেই বেড়ে চলার মধ্যে মৌলভিত্তির এই কোম্পানির শেয়ারদর গত ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে ফ্লোর প্রাইস ছাড়াতে পেরেছে কমই। গত ৭ মার্চের পর থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত একদিনও ফ্লোর ছাড়াতে পারেনি দাম।

এরপর ২ মে থেকে বাড়তে থাকে দাম। আর লেনদেন বাড়তে থাকে ২৫ এপ্রিল থেকে। সেদিন হাতবদল হয় ২ লাখ ৮৭ হাজার ৮১৬টি শেয়ার। পর্ষদ সভার দিন ৮ মে শেয়ার লেনদেন হয় ৩৭ লাখ ১৪ হাজার ৪০০টি।

এই সময়ে শেয়ারদর ফ্লোরের ৬৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে উঠে যায় ৭২ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত।

এমন ঘটনা কেবল চলতি বছর ঘটেছে, তা নয়। গত বছরের এপ্রিলের শুরুতে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার শেয়ারদর ছিল ৫০ টাকার কোটায়। অক্টোবরে লভ্যাংশ ঘোষণার আগে আগে সে শেয়ারদর দেড়শ টাকা হয়ে যায়। তালিকাভুক্তির পর দুই বছর এক শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিটি সে বছর লভ্যাংশ দেয় ১৫ শতাংশ।

এই লভ্যাংশ ঘোষণার পরের কয়েক মাসে আরও উত্থান হতে হতে এক পর্যায়ে শেষারদর ছাড়িয়ে যায় তিনশ টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রতি প্রান্তিকেই আগের অর্থবছরের চেয়ে কয়েক গুণ মুনাফার তথ্য আসতে থাকে।

তবে চূড়ায় ওঠার পর শেয়ারদর সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে একশ টাকা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এখন লোকসানে।

কয়েক বছর আগে মুন্নু স্টাফলারের (বর্তমান নাম মুন্নু অ্যাগ্রা) দর এভাবে ছয়শ টাকা থেকে বেড়ে ৫ হাজার ৪০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর কোম্পানি ৪০০ শতাংশ বোনাস, অর্থাৎ একটি শেয়ারের বিপরীতে চারটি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে।

২০১৮ ও ২০২০ সালে ২০০ শতাংশ করে বোনাস, অর্থাৎ একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি বোনাস শেয়ার দেওয়ার আগে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর শেয়ারদর বেড়ে কয়েক গুণ হয়।

২০১৮ সালে বার্জার পেইন্টস ১০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণার আগে শেয়ারদর বেড়ে দ্বিগুণ হয় অল্প কিছু দিনে।

কোম্পানির বক্তব্য মেলে না

পর্ষদ সভার আগে আগে সন্দেহজনক দাম বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে শেয়ারের লেনদেন বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের কোম্পানি সচিব এমদাদুল হক এসএমএসে লেখেন, “এ বিষয়ে মন্তব্য করার মত আমার কাছে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য নেই।”

আরেক বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের কোম্পানি সচিব প্রশ্ন শুনে কাজী মিজানুর রহমান তাদের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

ই মেইলে প্রশ্ন পাঠালে লাফার্জের পক্ষ থেকে বলা হয়, “যে কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ক্ষেত্রে কোম্পানি সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করে। নির্দিষ্ট সময়ে আইনের বিধান অনুসারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোম্পানি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে থাকে।”

জবাবে আরও বলা হয়, “কোম্পানির নীতি অনুযায়ী পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করি না।”

ডিএসইর ওয়েবসাইটে এমারেল্ড অয়েলের কোম্পানি সচিব সাদিয়া আফরিনের যে ফোন নম্বর দেওয়া আছে, সেটি অচল। কোম্পানির পরিচালক আফজাল হোসেনকে ফোন করলে তিনি কেটে দেন। এরপর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পরিচয় জানিয়ে এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

উদ্যেক্তারা নিজেরাই জড়িত?

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ মনে করেন, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা নিজেরাই এই ‘ইনসাইডার’ তথ্য ফাঁস করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব উদ্যোক্তারা নিজেরাই জড়িত, আমাকে অনেকেই বলে এ কথা। ম্যানেজমেন্ট থেকে ইঙ্গিত না পেলে নাকি অন্যরা ঢোকে না। একট গ্যাং কাজ করে, তারা বিনিয়োগকারী নয়। যে ঘোষণা আসবে, তা আগেই প্রচার হয়ে যায়।

“জুয়ারিদের শিরোমনি আছে, তাদের আবার আছে সাগরেদ। তারা গোপনে গোপনে প্রচার করে, তারপর শুরু হয়ে যায়।”

পুঁজিবাজারে এটা ‘ওপেন সিক্রেট’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সোজাসাপ্টা সবার সামনেই এগুলো হচ্ছে। বলেই লাভ কী? আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। অনেক ব্রোকার হাউজও বলে, এগুলো যদি করতে দেওয়া না হয়, তাহলে লেনদেন নাকি ২০০ কোটিতে নামবে, কারও বেতন হবে না।”

এদের কারণেই মৌলভিত্তির শেয়ারে আগ্রহ থাকছে না বলে মনে করেন আবু আহমেদ। তিনি বলেন, “২২ টাকার কোম্পানি ২৬ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে, ১৩ টাকার কোম্পানি দিয়েছে ২০ শতাংশ। কিন্তু ক্রেতা নেই। এটা কোনো কথা? আর কোনো কোনো কোম্পানির কিছুই নাই, শেয়ারদর কয়েকশ টাকা, এক মাস যেতে না যেতেই হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।”

‘বোঝা যায়, কিন্তু প্রমাণ মেলে না’

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বললেন তদন্তের সীমাবদ্ধতার কথা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যা হচ্ছে আপনিও বুঝছেন, আমরা বুঝছি। নইলে প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশনের আগে কোম্পানির দর এতটা বাড়ে কীভাবে?“

তাহলে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না– এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা ডিক্লারেশন আসার আগে ও পরে প্রাইস গ্রাফ দেখি। আমরা দেখি ওই সময় যারা শেয়ার কিনেছে, তাদের কোম্পানির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে কি না। ফরমাল সম্পর্ক না থাকলে তো ধরা যায় না।

“যারা এসব করে, তারাও খুব চালাক হয়ে গেছে। যেসব বিও হিসাব ব্যবহার করে শেয়ার কেনাবেচা হয়, তাদের সঙ্গে কোম্পানির দূরতম সম্পর্কও পাওয়া যায় না। লোকজনের নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা কোনো কিছুই মেলে না। ফলে কোনো লিংক পাওয়া যায় না।”

তাহলে কি কিছুই করার নেই?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে যে ডেটাবেজ আছে, সেটার সঙ্গে বিও সেটআপের ডাটাবেজের বাইরেও কোনো না কোনোভাবে আমরা তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করি। যেমন এবার এমারেল্ড অয়েলের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তাতে কিছু একটা হয়েছে বুঝে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে বলেছি তদন্ত করে দেখতে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন এলে ব্যবস্থা নেব।”

‘সবার সততা নিশ্চিত করা কঠিন’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদারের বক্তব্যও অনেকটা রেজাউল করিমের মত।

তিনি বলেন, “এটি আরেকটু খতিয়ে দেখার বিষয় আছে। কিন্তু কোম্পানির তথ্য আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।”

এতগুলো কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের আগে দাম বেড়ে যাওয়ায় কোনো সন্দেহই কি হয় না?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “তা হয়। হুট করে দাম বেড়ে বা কমে যাওয়ার পর কোম্পানির এসব তথ্য আসে। বোঝা যায় কিছু না কিছু ফাঁস হয়েছে।”

তাহলে ধরা হয় না কেন?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আসলে একটি কোম্পানির আর্থিক হিসাব যারা করেন, সেখানে অনেক লোক জড়িত থাকে। তাদের সবাইকে নজরে রাখাতো কঠিন। এখানে সচেতনতা, নিষ্ঠা ও সততার বিষয় আছে। কিন্তু এত মানুষের সততা নিশ্চিত করা তো কঠিন। তারপরও আমরাও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছি, তারা যেন এ বিষয়ে সচেতন নয়।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত